বাংলাদেশের বনাঞ্চল ( Forest of Bangladesh )

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - বাংলাদেশের সম্পদ ও শিল্প | NCTB BOOK

বনভূমি থেকে যে সম্পদ উৎপাদিত হয় বা পাওয়া যায় তাকে বনজ সম্পদ বলে। কোনো দেশের পারস্পরিক ভারসাম্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মোট ভূমির ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর কর্তৃক ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট বনভূমির পরিমাণ শতকরা প্রায় ১৭.৪৭৯১ ভাগ। জলবায়ু ও মাটির গুণাগুণের তারতম্যের কারণে বাংলাদেশের বনভূমিকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় (চিত্র ১১.৩)।

বাংলাদেশের বনভূমি

ক্রান্তীয় চিরহরিৎ এবং পাতাঝরা গাছের বনভূমি : বাংলাদেশের খাগড়াঝড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের প্রায় সব অংশে এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের কিছু অংশে এ বনভূমি বিস্তৃত । পাহাড়ের অধিক বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ এবং কম বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে পাতাঝরা গাছের বনভূমি দেখা যায় ।

ক্রান্তীয় পাতাঝরা গাছের বনভূমি : বাংলাদেশের প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহে এ বনভূমি রয়েছে। এ বনভূমিকে দুই অংশে ভাগ করা হয়েছে- (ক) ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলার মধুপুর ও ভাওয়ালের বনভূমি; (খ) দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় বরেন্দ্র বনভূমি অবস্থিত। শীতকালে এ বনভূমির বৃক্ষের পাতা ঝরে যায়। গ্রীষ্মকালে আবার নতুন পাতা গজায় ।
স্রোতজ বনভূমি বা সুন্দরবন : উত্তরে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলা; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর; পূর্বে হরিণঘাটা নদী, পিরোজপুর ও বরিশাল জেলা এবং পশ্চিমে রাইমঙ্গল, হাড়িয়াভাঙ্গা নদী ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের | আংশিক প্রান্ত সীমা পর্যন্ত এ বনভূমি বিস্তৃত । এটি খুলনা বিভাগের ৬,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত । | সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা ও লোনা পানি এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য এ অঞ্চল বৃক্ষ সমৃদ্ধ ।

কাজ : বিভিন্ন উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য ও নাম দেওয়া হলো। এগুলো কোন বনভূমিতে অবস্থিত তা লেখ। 

 উদ্ভিদ ও বৈশিষ্ট্য  বনভূমির নাম
 ১। সুন্দরি, গরান, গেওয়া, ধুন্দল, কেওড়া ও গোলপাতা সাধারণত স্রোতময় মিঠা ও লোনা পানির সংযোগস্থলে জন্মে। ২। শাল, গজারি, কড়ই, হিজল প্রভৃতি গাছের পাতা একবারে
ঝরে যায়। ৩। চাপালিশ, ময়না, তেলসুর, বাঁশ প্রভৃতি গাছের পাতা
একসঙ্গে ঝরে যায় না।
 

বনাঞ্চলের গুরুত্ব (Importance of forest) : বনজ সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের বনজ সম্পদের পরিমাণ সীমিত এবং দিন দিন কমে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনভূমির গুরুত্ব অপরিসীম।

১। প্রাকৃতিক গুরুত্ব : জীববৈচিত্র্য রক্ষা, মাটি বা ভূমিক্ষয় রোধ, ভূমিধস রক্ষা, বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি, আবহাওয়া আর্দ্র রাখা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে বনভূমি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ।

২। পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা : সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় স্থান। এর জীববৈচিত্র্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৩। পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ : মানুষ তার দৈনন্দিন প্রয়োজনে কাঠ, বাঁশ, বেত, মধু, মোম প্রভৃতি বন থেকেসংগ্রহ করে থাকে। এছাড়াও জীবজন্তুর চামড়া ও ভেষজ দ্রব্য বনভূমি থেকে সংগ্রহ করা হয়।
৪। নির্মাণের উপকরণ : মানুষ বনভূমি থেকে তার ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র নির্মাণের জন্য কাঠ, বাঁশ,বেত ইত্যাদি যাবতীয় উপকরণ সংগ্রহ করে ।

৫। শিল্পের উন্নতি : কাগজ, রেয়ন, দিয়াশলাই, ফাইবার বোর্ড, খেলনার সরঞ্জাম প্রভৃতির উৎপাদন কাজে বনজ সম্পদ ব্যবহৃত হয়ে শিল্পের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। কর্ণফুলী কাগজকল, খুলনার নিউজপ্রিন্ট কারখানা বনজ সম্পদের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

৬। দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস : উপকূলীয় অঞ্চলের বনভূমি সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৭। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা : বনভূমি থেকে কাঠ সংগ্রহ করে তা দিয়ে রেললাইনের স্লিপার, মোটরগাড়ি, নৌকা, লঞ্চ, জাহাজ ইত্যাদির কাঠামো, বৈদ্যুতিক খুঁটি, রাস্তার পুল প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়।

৮। সরকারের আয়ের উৎস : বনজ সম্পদ সরকারের আয়ের একটি উৎস। যেমন— বনজ সম্পদ বিক্রি ও এর উপর কর ধার্য করে সরকার রাজস্ব আয় বাড়িয়ে থাকে ।

৯। কৃষি উন্নয়ন : বনভূমি দেশের আবহাওয়াকে আর্দ্র রাখে। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে যা কৃষি উন্নয়নে সহায়ক ।

১০। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন : বনের বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া, দাঁত, শিং, পশম এবং কিছু জীবন্ত বন্য জন্তু রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। বনজ সম্পদ ব্যবহারে আমরা যত্নশীল হবো। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার তাগিদে বনজ জীববৈচিত্র্যের প্রতি যত্নশীল ও রক্ষণশীল হতে হবে।

Content added || updated By
Promotion